নাক ফুল গাছের উপকারিতা - নাকফুল গাছ বৈজ্ঞানিক নাম

আসসালামু আলাইকুম bdvlog24 এর পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হলঃ নাক ফুল গাছের উপকারিতা - নাকফুল গাছ বৈজ্ঞানিক নাম? লিখছি আমি আমির হামজা, তো চলুন আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় শুরু করা যাক। 

নাকফুল গাছের অসাধারণ গুণাবলী ও বৈজ্ঞানিক নামকরণ

গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের কাছে নাকফুল গাছ হচ্ছে একটি পরিচিত নাম। এই প্রাচীন উদ্ভিদটির মূল বৈজ্ঞানিক নামকরণ হল Acmella repens। এটি সূর্যমুখী পরিবারভুক্ত একটি বহুবর্ষজীবী ফুল গাছ। নাকফুল নামকরণের কারণ হল এর ফুলগুলির নাকের মতো আকৃতি। বিশেষজ্ঞরা একে 'ইলেকট্রিক ডেইজি' নামেও অভিহিত করেন, কারণ এর স্বাদ পিপারমিন্টের মতো তীক্ষ্ণ এবং ডাঁটা ছিড়ে মুখে দিলে বিদ্যুতের শকের মতো অনুভূতি হয়।

নাক ফুল গাছের উপকারিতা

নাকফুল গাছের বৈশিষ্ট্য

নাকফুল গাছের ফুলগুলি সাধারণত হলুদাভ রঙের হয়ে থাকে। এর পাতাগুলি সবুজ, মসৃণ ও ডিম্বাকৃতি এবং অগ্রভাগটি কিছুটা সুচালো থাকে। এই উদ্ভিদটি প্রধানত আগাছার মধ্যে জন্মায়। প্রতিটি কাণ্ডের শীর্ষে একটি করে ফুল ফোটে। গাছগুলি সাধারণত রাস্তাঘাট, জঙ্গল এবং অন্যান্য প্রান্তরে সহজেই পাওয়া যায়।

নাকফুল গাছের ঔষধি উপকারিতা

যদিও দেখতে সাধারণ, নাকফুল গাছের অনেকগুলি চিকিত্সামূলক উপকারিতা রয়েছে। এগুলি হল:

মাড়িব্যথা ও দাঁতের ব্যথা নিরাময়ে

মাড়িব্যথা বা দাঁতের ব্যথার ক্ষেত্রে নাকফুল গাছের ফুল বিশেষভাবে কার্যকর। ব্যথিত অঞ্চলে ফুলটি লাগিয়ে রাখলেই ব্যথা দ্রুত কমতে থাকে।

ঠাণ্ডা জ্বর ও গলাব্যথা নিরসনে

ঠাণ্ডা বা গলাব্যথার সময় নাকফুল পাতা পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানিটি হালকা গরম অবস্থায় মুখে নিয়ে গড়গড়া করলে বা খেলে উপশম পাওয়া যায়।

আমাশয়ের সমস্যা দূরীকরণে

আমাশয়ের সমস্যায় নাকফুল পাতা ১০ গ্রামের মতো নিয়ে পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি পান করলে উপকার পাওয়া যায়।

গনোরিয়া রোগ নিরাময়ে

গনোরিয়া রোগে প্রস্রাবের জায়গায় জ্বালা-পোড়া হলে নাকফুল পাতা ও কাণ্ডের রস তিন সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৩-৪ চা চামচ করে খেতে হবে। এতে জ্বালা-পোড়া কমে যাবে।

পেট ফাঁপার সমস্যা দূরীকরণে

পেট ফাঁপার সমস্যায় এক থেকে দুই চা চামচ নাকফুল পাতার রসকে চায়ের হাফ কাপ গরম পানির সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

বিচ্ছু, মৌমাছি কামড়ের প্রতিকার

বিচ্ছু, মৌমাছি বা মধুপোকার কামড়ে আক্রান্ত স্থানে নাকফুল পাতার রস লাগালে ব্যথা ও জ্বালা-যন্ত্রণা প্রশমিত হয়।

শরীরের জ্বালা-পোড়া দূরীকরণে

শরীরের জ্বালা-পোড়ার সমস্যায় প্রতিদিন সকাল-বিকেল চায়ের হাফ কাপ হালকা গরম পানির সাথে নাকফুল পাতার রস মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

নাকফুল গাছের অন্যান্য ব্যবহার

শুধু ঔষধি উপকারিতা নয়, নাকফুল গাছের বিভিন্ন অংশ খাদ্য, মসলা এবং প্রসাধনি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কাঁচা অবস্থায় নাকফুল পাতা সালাদ তৈরিতে এবং স্যুপ রান্নায় ব্যবহার করা হয়। খাবারের স্বাদ বাড়াতে নাকফুল রসও ব্যবহৃত হয়। আর নিয়মিত হাত-পায়ের নখে নাকফুল রস ঘষলে নখগুলির উজ্জ্বলতা বাড়ে।

নাকফুল গাছের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ব্যবহারের ইতিহাস

নাকফুল গাছকে ব্যবহার করার একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। প্রাচীন পারসিক চিকিত্সাশাস্ত্রে এই উদ্ভিদের উল্লেখ পাওয়া যায়। বর্তমান ভারতের অসম রাজ্যের কামরূপ অঞ্চলেও এর ব্যবহার প্রচলিত ছিল।

আদিবাসী সম্প্রদায়ের ব্যবহার

ভারতের বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়, যেমন খাসি, জয়ন্তিয়া এবং গারো উপজাতিগুলি দীর্ঘদিন ধরেই নাকফুলকে ঔষধি উদ্ভিদ হিসাবে ব্যবহার করে আসছে। তাদের পারম্পরিক চিকিত্সাপদ্ধতিতে নাকফুল গাছের বিভিন্ন অংশের ব্যবহার দেখা যায়।

লাটিন আমেরিকার ব্যবহার

লাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশেও নাকফুল গাছের ব্যবহার প্রচলিত রয়েছে। ব্রাজিল, পেরু এবং মেক্সিকোর কিছু আদিবাসী জনগোষ্ঠী এটিকে ঔষধি উদ্ভিদ হিসাবে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এমনকি এর ফুলগুলিকে তারা খাদ্য হিসাবেও ব্যবহার করে থাকে।

নাকফুল গাছের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

যেহেতু নাকফুল গাছের বিভিন্ন অংশ ঔষধি উদ্ভিদ হিসাবে ব্যবহৃত হয়, তাই এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। এগুলি হল:

  1. মাথাব্যথা
  2. বমি বমি ভাব
  3. পেটব্যথা
  4. দস্ত
  5. চোখে জ্বালাপোড়া

তবে এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই দুর্লভ এবং সাধারণত মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণের ফলে দেখা যায়। সুতরাং নির্দিষ্ট মাত্রা মেনে চললে নাকফুলের ব্যবহারে কোনো ঝুঁকি নেই বললেই চলে।

নাকফুল গাছের সংরক্ষণ

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, নাকফুল গাছের অবৈধ সংগ্রহ এবং অনিয়ন্ত্রিত বেদখল কারণে এই উদ্ভিদটি বর্তমানে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা এর সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।

আইন প্রণয়ন

কিছু দেশ ইতোমধ্যে নাকফুল গাছের অবৈধ সংগ্রহ এবং বেদখলকে আইনসম্মত অপরাধ হিসাবে ঘোষণা করেছে। এর ফলে এই উদ্ভিদটির সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।

জৈব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন

বিভিন্ন দেশে নাকফুলসহ বিপন্ন উদ্ভিদগুলির জৈব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য বিশেষায়িত কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। এসব কেন্দ্রে উদ্ভিদগুলিকে সুরক্ষিত পরিবেশে সংরক্ষণ করা হয়।

জনসচেতনতা বৃদ্ধি

নাকফুল গাছের গুরুত্ব এবং সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রচারাভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে মানুষকে এই বিপন্ন উদ্ভিদটির সুরক্ষায় সহযোগিতা করতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

নাকফুল গাছের ভবিষ্যত সম্ভাবনা

বর্তমানে নাকফুল গাছকে বিপন্ন উদ্ভিদ হিসাবে শনাক্ত করা হলেও এর বিভিন্ন গুণাবলী এবং সম্ভাবনাকে অগ্রাহ্য করা যায় না। বিশেষজ্ঞরা এই উদ্ভিদটির উপর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

নতুন ঔষধ উদ্ভাবনের সম্ভাবনা

নাকফুল গাছে উপস্থিত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের গুণাবলী বিশ্লেষণ করে নতুন উদ্ভাবনের সম্ভাবনা রয়েছে। গবেষকরা এই উদ্ভিদটির রাসায়নিক গঠন পর্যালোচনা করছেন এবং নতুন ঔষধ তৈরির জন্য তা কাজে লাগাতে পারবেন কিনা তা নিরীক্ষণ করছেন। এখন পর্যন্ত প্রাথমিক গবেষণাগুলি ইতিবাচক ফলাফল দেখিয়েছে।

খাদ্য শিল্পে ব্যবহারের সুযোগ

নাকফুল গাছের পাতা এবং ফুলগুলি খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকলেও এখনও তা বাণিজ্যিকভাবে বেশি পরিচিত নয়। তবে এর স্বাদ এবং পুষ্টিগুণাবলীর কারণে খাদ্য শিল্পে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা নাকফুলের পাতা ও ফুলগুলিকে নতুন খাবারের উপাদান হিসাবে ব্যবহারের বিভিন্ন সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন।

কসমেটিক্স শিল্পে ব্যবহারের সুযোগ

নাকফুল গাছের রস এবং অন্যান্য অংশগুলিতে উপস্থিত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের কারণে এটি কসমেটিক্স শিল্পে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত হতে পারে। এগুলি চামড়ার স্বাস্থ্য উন্নয়নে, রঙ প্রসারণে এবং অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যেই এ দিকে গবেষণা শুরু করেছেন।

কৃষি খাতে ব্যবহারের সম্ভাবনা

নাকফুল গাছের বিভিন্ন অংশে জীবাণুনাশক এবং কীটনাশক গুণাবলী রয়েছে। এই কারণে কৃষি খাতে এটি ব্যবহৃত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা নাকফুলের রস বা অন্যান্য অংশগুলি থেকে প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক ও কীটনাশক তৈরির সম্ভাবনা পরীক্ষা করছেন। এতে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার কমানো সম্ভব হবে।

অনেক গবেষণা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেই নাকফুল গাছের এসব সম্ভাবনাগুলি বাস্তবায়িত হতে পারবে। তবে এর বিভিন্ন গুণাবলী এবং পুষ্টিগত মান বিবেচনা করলে এটি ভবিষ্যতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url