টবে চারা গাছ লাগানোর পদ্ধতি - টবে কি কি গাছ লাগানো যায়

আসসালামু আলাইকুম bdvlog24 এর পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হলঃ টবে চারা গাছ লাগানোর পদ্ধতি - টবে কি কি গাছ লাগানো যায়। লিখছি আমি আমির হামজা, তো চলুন আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় শুরু করা যাক। 

টবে চারা গাছ লাগানোর পদ্ধতি

বাগানের সৌন্দর্য এবং সুস্বাস্থ্যের মায়াবী আনন্দ: টবে গাছ লাগানোর পথনির্দেশিকাআজকাল শহরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জন্য বাগান করা হয়ে উঠেছে একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। জায়গার অভাব, পরিবেশগত বিঘ্ন এবং সময়ের চাপের কারণে অনেকেই বাগান করার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন না। তবে এই সমস্যার সমাধান রয়েছে - টবে গাছ লাগানো। এটি একটি অপ্রতিরোধ্য বিকল্প যা আপনাকে বাড়ির ভিতরেই বাগানের মায়াবী আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ করে দেবে।

টব

টব নির্বাচন করার সময় আপনাকে বিবেচনা করতে হবে গাছের আকার এবং প্রকৃতি। বৃহৎ গাছের জন্য বড় আকারের টব, আর ছোট গাছের জন্য ছোট টব ব্যবহার করা উচিত। অন্যদিকে, ঝুলন্ত গাছের জন্য হালকা ওজনের টব নির্বাচন করুন। আপনার বাগানের থিম এবং সাজসজ্জার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ টবের নকশা বেছে নিন। বিভিন্ন আকার, রঙ ও নকশার টব ব্যবহার করে বাগানে বৈচিত্র্য আনুন।

টবে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এজন্য টবের নিচে ছিদ্র রাখুন। অন্যথায় জল জমে থাকলে গাছের শিকড় পচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। আপনার বাজেটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ টব বেছে নিন - যেমন মাটির টব, প্লাস্টিকের টব, কাঠের টব বা সিমেন্টের টব।

মাটি

টবের গাছের জন্য সাধারণ বাগানের মাটি থেকে আলাদা ধরনের মাটি প্রয়োজন। এই মাটি হতে হবে হালকা, ঝুরঝুরে এবং জৈব সার সমৃদ্ধ। তা তৈরি করতে হবে নিম্নলিখিত উপাদানগুলি মিশিয়ে:

  • বাগানের মাটি
  • কোঁকোপিট (জল ধরে রাখার জন্য)
  • বালি (জল নিষ্কাশন সহজ করে এবং বাতাস চলাচল বাড়ায়)
  • জৈব সার (গোবর সার, পাতাসাড়া সার বা ভার্মিকম্পোস্ট)
  • পারলাইট (ঐচ্ছিক, জল ধরে রাখতে সাহায্য করে)

মাটির মিশ্রণে সাধারণত ২ ভাগ বাগানের মাটি, ১ ভাগ কোঁকোপিট এবং ১ ভাগ বালি থাকে। এছাড়া মোট মাটির পরিমাণের প্রায় ¼ অংশ জৈব সার মিশাতে হবে।

চারা

সঠিক চারা নির্বাচন করতে হবে টবের গাছের সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য। এক্ষেত্রে আপনাকে বিবেচনা করতে হবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি:

  • আপনার বাগানে কতটা আলোর পরিমাণ রয়েছে - তদনুযায়ী সূর্যপ্রেমী, ছায়াপ্রেমী বা মাঝারি আলোর গাছের চারা নির্বাচন করুন।
  • টবের আকারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ গাছের চারা বেছে নিন।
  • আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ফল, ফুল বা ভেষজ গাছের চারা নির্বাচন করুন।
  • সুস্থ চারা বেছে নিন যার পাতা সবুজ ও ঝকঝকে, কান্ড শক্ত, শিকড় ভালোভাবে বেরিয়েছে এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ নেই।

খ্যাতিমান ও বিশ্বস্ত নার্সারি থেকে চারা কিনুন। চাহিদা মতো অনলাইনেও চারা পাওয়া যায়।

এবার আসুন জেনে নেই টবে গাছ লাগানোর পদ্ধতি এবং পরিচর্যা নিয়ম।

টবে গাছ লাগানোর ধাপসমূহ

টবে গাছ লাগানোর পদ্ধতি অনুসরণ করতে কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হবে। এগুলি হলো:

প্রথম ধাপ: টব প্রস্তুতি

প্রথমেই আপনাকে টবটি ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর টবের নিচে ছোট পাথর রেখে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করুন।

দ্বিতীয় ধাপ: মাটি প্রস্তুতি

তৈরি করা মাটির মিশ্রণ দিয়ে টবটি ¾ অংশ পূরণ করুন। মনে রাখবেন, মাটি ভরার আগে ১-২ সপ্তাহ অপেক্ষা করলে জৈব সার কম্পোস্ট হয়ে মাটি আরও উর্বর হবে।

তৃতীয় ধাপ: চারা রোপণ

মাটিতে গর্ত করে চারাটি রোপণ করুন। গর্তের আকার এমন হওয়া প্রয়োজন যাতে গাছের গোড়া পুরোপুরি ভেতরে চলে যায় এবং মাটি দিয়ে চেপে ধরা যায়। রোপণের সময় গর্তে এক চামচ সার দেওয়া যেতে পারে।

চতুর্থ ধাপ: জল প্রদান

চারা রোপণের পর প্রচুর পরিমাণ জল দিন যাতে মাটি ভেজা থাকে। এরপর নিয়মিত জল দিতে থাকুন, তবে অতিরিক্ত জল দেওয়া যাবে না।

টবে গাছের যত্ন ও পরিচর্যা

টবে গাছ লাগানোর পরও তার যথাযথ যত্ন নেওয়া অপরিহার্য। এজন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মেনে চলতে হবে:

আলোর চাহিদা পূরণ

প্রতিটি গাছের আলোর চাহিদা আলাদা। কিছু গাছ সরাসরি সূর্যালোক পছন্দ করে, আবার কিছু ছায়াযুক্ত পরিবেশ পছন্দ করে। সুতরাং গাছের প্রকৃতি অনুযায়ী সঠিক জায়গায় টব রাখতে হবে।

জল প্রদানের নিয়ম মেনে চলা

বেশিরভাগ গাছই অতিরিক্ত জল সহ্য করতে পারে না। তাই জল দেওয়ার আগে মাটি শুকিয়ে গেছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিন। মাটিতে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেখুন, প্রথম দুই জয়েন্ট শুকনো থাকলে তখনই জল দিন। সকালে জল দেওয়াই উত্তম।

সার প্রয়োগ

গাছের জন্য উপযুক্ত সার ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত সার দিলে গাছ সুন্দর ও সতেজ থাকবে। তবে সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে নির্দেশাবলী মেনে চলতে হবে, অতিরিক্ত সার ক্ষতিকর হতে পারে।

নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা

গাছের পাতা, কান্ড, ডালপালা নিয়মিত পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। মৃত পাতা ও ডালপালা কেটে ফেলুন। মাঝে মাঝে টব পরিষ্কার করলে গাছ সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর থাকবে।

গাছের প্রকৃতি বুঝে নেওয়া

প্রতিটি গাছের আলাদা চাহিদা আছে। তাই আপনার গাছের প্রকৃতি বুঝে নিন। তার সমস্যাগুলি চিহ্নিত করতে শিখুন - যেমন কোন পোকামাকড় আছে কিনা, পাতা কেন মলিন হয়ে গেছে ইত্যাদি। সমস্যা চিহ্নিত হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।

উপযুক্ত সময় নির্বাচন

টবে গাছ রোপণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো বসন্তকাল। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে যে কোনো সময় আপনি পছন্দের গাছ রোপণ করতে পারেন। তবে অতিরিক্ত গরম এড়িয়ে চলুন।

টবে লাগানোর উপযোগী গাছসমূহ

এবার আসা যাক টবে লাগানোর উপযোগী গাছসমূহের কথায়। বিভিন্ন ধরনের গাছ টবে লাগানো যায়। এগুলি হলো:

ভেষজ গাছ

ভেষজ গাছগুলি টবে লাগানোর জন্য একটি দুর্দান্ত পছন্দ। কারণ এগুলি সহজেই বৃদ্ধি পায় এবং রান্নাবান্না, চা বা এমনকি ঔষধি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়। টবের জন্য জনপ্রিয় কিছু ভেষজ গাছের মধ্যে রয়েছে তুলসী, পুদিনা, রোজমেরি, থাইম ইত্যাদি। এসব গাছকে নিয়মিত পর্যাপ্ত জল দিতে হবে, তবে অতিরিক্ত জল দেওয়া যাবে না কারণ তারা ভিজে মাটিতে বসতে পছন্দ করে না।

সাকুলেন্ট গাছ

যারা কম রক্ষণাবেক্ষণের গাছ পছন্দ করেন তাদের জন্য সাকুলেন্ট বা শুষক প্রিয় গাছগুলি একটি অসাধারণ পছন্দ। এই গাছগুলির ঘন, মাংসল পাতা রয়েছে যা জল সঞ্চয় করে রাখতে সক্ষম। ফলে এদের খুব ঘন ঘন জল দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। টবের জন্য জনপ্রিয় কিছু সাকুলেন্ট গাছের মধ্যে রয়েছে ঘৃতকুমারী, জেড উদ্ভিদ, মুরগি এবং ছানা। এরা উজ্জ্বল আলো এবং ভালো নিষ্কাশনযুক্ত মাটিতে ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে।

শাকসবজি গাছ

শাকসবজি গাছও টবে জন্মানো যায়, যা সীমিত স্থান থাকা সত্ত্বেও বাগান করার একটি দুর্দান্ত বিকল্প। টবের জন্য জনপ্রিয় কিছু শাকসবজির মধ্যে রয়েছে টমেটো, মরিচ, বেগুন ইত্যাদি। এদের জন্য যথেষ্ট বড় টব বেছে নিতে হবে যাতে গাছগুলি মিটমাট করে বেড়ে উঠতে পারে। পুষ্টিসমৃদ্ধ মাটি এবং সার ব্যবহার করলে এদের বৃদ্ধি আরও সহজ হবে।

ফুল গাছ

আপনি যদি আপনার টব বাগানে কিছু রঙ এবং সৌন্দর্য যোগ করতে চান, তাহলে ফুল গাছ লাগানোর কথা বিবেচনা করুন। টবের জন্য জনপ্রিয় কিছু ফুল গাছের মধ্যে রয়েছে পেটুনিয়া, গান্ধরাজ, পানসি ইত্যাদি। এই গাছগুলিকে নিয়মিত জল এবং ভালো নিষ্কাশনযুক্ত মাটি দিতে হবে।

ফল গাছ

অবশেষে, ছোট আকারের ফল গাছগুলিও টবে জন্মানো যায়, যা সীমিত উঠানের জায়গার জন্য একটি কার্যকর বিকল্প। টবের জন্য জনপ্রিয় কিছু ছোট ফল গাছের মধ্যে রয়েছে লেবু গাছ, ডুমুর গাছ, বামন আপেল গাছ ইত্যাদি। এদের জন্য যথেষ্ট বড় টব বেছে নিতে হবে যাতে শিকড় ব্যবস্থা সুবিধাজনক হয়। পুষ্টিসমৃদ্ধ মাটি এবং সার ব্যবহার করলে এদের বৃদ্ধি আরও উন্নত হবে

উপসংহারে বলা যায়, টবে বাগান করা হচ্ছে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রবণতা যা আপনাকে বাড়ির ভিতরেই বাগানের আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ করে দেয়। ভেষজ, সাকুলেন্ট, শাকসবজি, ফুল এবং ছোট ফল গাছ সহ বিভিন্ন ধরনের গাছ থেকে বেছে নিয়ে আপনি আপনার স্বাদ এবং পছন্দ অনুযায়ী একটি সুন্দর টব বাগান তৈরি করতে পারেন। শুধু প্রয়োজন হবে সঠিক মাটি, জল এবং সার নির্বাচন করা এবং গাছের যথাযথ যত্ন নেওয়ার। তাহলে দেরি কি, গাছের প্রেমিক হিসেবে আজই শুরু করুন আপনার নিজস্ব টব বাগান তৈরির কাজ!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url